টিনটিনের অ্যাডভেঞ্চারস (২০১১) সম্পূর্ণ সিনেমা
টিনটিনের অ্যাডভেঞ্চার - এক রোমাঞ্চকর কমিক জগতের অসাধারণ যাত্রা
"The Adventures of Tintin" একটি ২০১১ সালের অ্যানিমেটেড অ্যাডভেঞ্চার চলচ্চিত্র, যা বেলজিয়ান কার্টুনিস্ট হার্জের জনপ্রিয় কমিক সিরিজ "টিনটিন" অবলম্বনে নির্মিত। এটি পরিচালনা করেছেন স্টিভেন স্পিলবার্গ, যিনি পিটার জ্যাকসন এবং ক্যাথলিন কেনেডির সঙ্গে প্রযোজনাও করেছেন। চিত্রনাট্য রচনা করেছেন স্টিভেন মফ্যাট, এডগার রাইট এবং জো কর্নিশ। ছবিতে টিনটিন চরিত্রে জেমি বেল, ক্যাপ্টেন হ্যাডক চরিত্রে অ্যান্ডি সার্কিস, এবং ভিলেন সাখারিন চরিত্রে ড্যানিয়েল ক্রেইগ কণ্ঠ দিয়েছেন।
গল্পে, টিনটিন, তার কুকুর স্নোই এবং ক্যাপ্টেন হ্যাডক একসাথে "ইউনিকর্ন" নামের এক প্রাচীন জাহাজের গুপ্তধনের সন্ধানে বের হয়, যেটির ক্যাপ্টেন ছিলেন হ্যাডকের পূর্বপুরুষ স্যার ফ্রান্সিস হ্যাডক। তবে তাদের এই অভিযানে বাধা হয়ে দাঁড়ায় ইভান ইভানোভিচ সাখারিন, যিনি স্যার ফ্রান্সিসের শত্রু রেড র্যাকহাম-এর বংশধর।
স্পিলবার্গ ও হার্জে পরস্পরের কাজের ভক্ত ছিলেন। হার্জের মৃত্যুর পর ১৯৮৩ সালে স্পিলবার্গ টিনটিনের চলচ্চিত্র স্বত্ব অধিগ্রহণ করেন এবং ২০০২ সালে তা পুনঃনবায়ন করেন। প্রাথমিকভাবে ২০০৮ সালে চিত্রগ্রহণ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ইউনিভার্সাল পিকচার্স প্রকল্প থেকে সরে যাওয়ায় তা ২০১১-তে মুক্তি পায়। টিনটিন চরিত্রে প্রথমে থমাস ব্রডি-সাংস্টার থাকলেও পরবর্তীতে তাকে জেমি বেল দ্বারা প্রতিস্থাপিত করা হয়।
এই চলচ্চিত্রটি "The Crab with the Golden Claws", "The Secret of the Unicorn" এবং "Red Rackham's Treasure" গ্রন্থ থেকে অনুপ্রাণিত। এটি ব্রাসেলসে ২২ অক্টোবর ২০১১ প্রিমিয়ার হয় এবং বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সাফল্য পায়। এর বাজেট ছিল ১৩৫ মিলিয়ন ডলার, আর আয় হয় প্রায় ৩৭৪ মিলিয়ন ডলার। এটি গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ড-এ সেরা অ্যানিমেটেড ফিল্ম হিসেবে পুরস্কার পায় এবং জন উইলিয়ামস অস্কারে সেরা সঙ্গীত বিভাগের জন্য মনোনীত হন। সিক্যুয়েলের ঘোষণা থাকলেও তা বর্তমানে উন্নয়ন জটে আটকে আছে।
বিশ্ব সাহিত্যের ইতিহাসে কমিকস একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। সেই কমিকস জগতের এক অনন্য নাম হচ্ছে টিনটিন। এই চরিত্রটি শুধু একটি কল্পিত সাংবাদিক নয়, বরং সত্য, ন্যায় এবং সাহসের প্রতীক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। বেলজিয়ান শিল্পী হার্জে কর্তৃক সৃষ্ট এই চরিত্রটি ১৯২৯ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় এবং পরবর্তীতে বিশ্বজুড়ে শিশু-কিশোর ও প্রাপ্তবয়স্কদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।
টিনটিন একজন তরুণ সাংবাদিক, যার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তীক্ষ্ণ বুদ্ধি, অপরিসীম সাহস, সততা ও মানবতাবোধ। সে সবসময় সত্য উদ্ঘাটন এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে প্রস্তুত। তার বিশ্বস্ত সঙ্গী স্নোয়ি, একটি সাদা কুকুর, যাকে ছাড়া টিনটিনের অভিযান অসম্পূর্ণ। এছাড়াও, ক্যাপ্টেন হ্যাডক, প্রফেসর ক্যালকুলাস, এবং ডুপন-ডুপন নামের দুই অদ্ভুত গোয়েন্দা প্রায় সব কাহিনিতে উপস্থিত থাকে, যারা গল্পে রসিকতা এবং বৈচিত্র্য যোগ করে।
টিনটিনের কাহিনিগুলো শুধু বিনোদন নয়, বরং পাঠকদের জন্য একটি শিক্ষামূলক অভিজ্ঞতাও বটে। গল্পগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং ভূগোল সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। টিনটিন কমিকস বিশ্বের ১০০টিরও বেশি ভাষায় অনুবাদ হয়েছে এবং ২৫ কোটির বেশি কপি বিক্রি হয়েছে। বাংলাভাষী পাঠকদের জন্যও টিনটিন অনূদিত হয়েছে, এবং বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে এর বিপুল পাঠক রয়েছে।
টিনটিনের উল্লেখযোগ্য অভিযান
টিনটিনের অ্যাডভেঞ্চার সিরিজে মোট ২৪টি বই রয়েছে, যার প্রতিটি একটি নতুন দেশ, নতুন সমস্যা এবং নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে হাজির হয়েছে। তার কিছু বিখ্যাত অভিযান হল:
- 
"The Secret of the Unicorn" এবং "Red Rackham's Treasure": যেখানে টিনটিন একটি পুরনো জলদস্যুর গুপ্তধনের খোঁজে যাত্রা করে। 
- 
"The Blue Lotus": চীনে সংঘটিত মাদক চোরাচালানের বিরুদ্ধে সংগ্রাম। 
- 
"Destination Moon" এবং "Explorers on the Moon": বিজ্ঞানভিত্তিক গল্প যেখানে টিনটিন চাঁদে যাত্রা করে, যা ওই সময়ে একটি বিপ্লবী ধারণা ছিল। 
- "Tintin in Tibet": বন্ধুর জন্য আত্মত্যাগ ও সাহসিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত।
টিনটিন কেবল একটি কমিক চরিত্র নয়; সে এক আদর্শ, যে আমাদের শেখায় সততা, সাহস এবং বন্ধুত্বের প্রকৃত অর্থ। তার প্রতিটি অ্যাডভেঞ্চার একেকটি অনুপ্রেরণার উৎস, যেখানে রহস্য, রোমাঞ্চ ও মানবিকতা একসাথে মিলিত হয়েছে। টিনটিন আজও প্রাসঙ্গিক এবং ভবিষ্যতেও পাঠকদের মনে স্থান করে থাকবে।
 
 
 
 
কোন মন্তব্য নেই