জীবনে সফল হবার ৮টি উপায়
আমরা প্রত্যেকেই জীবনে সফল হতে চাই। কিন্তু বিভিন্ন কারণে তা হয়ে উঠে না। কেউ সফল হতে চাই লেখাপড়ায়, কেউ বা ব্যবসায়। অনেকের মতে ভালো চাকরী পেলেই তাই সফলতা। কিন্তু আমাদের মাঝে এই নিয়ে অনেক মতামত আছে। তো চলুন জেনে নেই।
"কিয়ামতের দিন মুমিনের পাল্লায় উত্তম চরিত্রের চেয়ে ভারী কোনো জিনিস থাকবে না। আর আল্লাহ তাআলা সেই ব্যক্তিকে ঘৃণা করেন, যে অশ্লীল ও অভদ্র আচরণকারী।"
(সুনান আত-তিরমিযী; হাদিস: ২০০২)
“তোমরা ঈমান না আনা পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, আর পরস্পরকে ভালো না বাসা পর্যন্ত প্রকৃত ঈমানদার হতে পারবে না। আমি কি তোমাদের এমন একটি জিনিস বলব, যা করলে তোমরা পরস্পর ভালোবাসবে? তোমাদের মাঝে সালামের প্রচলন করো।”
(সহিহ মুসলিম: ৫৪)
সফলতা কি?
কোনো একটি বিষয়ে সুফল পাওয়াকে সফলতা বলে।
সহজ কথায় কোনো বড় সমস্যা সমাধান করা যা জীবনকে বদলে একটি ভালো কিছু দেবে। মনে রাখবেন, সুস্থ জীবন, ভালো স্বাস্থ্য, পরিবারের সাথে সুন্দর সময় কাটানো, ইতিবাচক মানসিকতাও কিন্তু সফলতা।
যেমন: আপনি বললেন, আজকে থেকে আপনি সময় নষ্ট করবেন না। কিন্তু এটা তো সম্ভব নয়। অন্যদিকে আপনি বললেন, আজকে থেকে আপনি ফজরের নামাজের পর ব্যায়াম করলেন এবং তারপর কোনো ভালো বইয়ের ১০ পৃষ্ঠা পড়লেন।
দেখা যাবে এটি এক মাস পর আপনার জীবনে একটি বিরাট বড় ভালো প্রভাব ফেলেছে।
সফল ব্যক্তিদের ৮টি গুণ, যা আপনার থাকা উচিতঃ
১) নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যঃ
প্রত্যেক ব্যক্তির নিদিষ্ট একটি লক্ষ্য থাকে। তবে লক্ষ্যটি সঠিক জায়গায় হতে হবে। যেমনঃ আপনি ভাবলেন যে আপনি সরকারি চাকুরীজীবি হবেন। এটা আপনার ব্যাপার, কিন্তু দুর্নীতির উদ্দেশ্য তা চাচ্ছেন। লক্ষ্য ভালো হলেও উদ্দেশ্য ঠিক নয়। ভিন্ন কিছু চিন্তা করুন।
সারাদিন শুধু পড়াশোনা করে পরিক্ষায় টপার হলেন, কিন্তু শরীর ঠিক নাই। এর থেকে আপনার সেই বন্ধু ভালো আছে যে দিনে মাত্র ৩ ঘন্টা পড়েছে এবং জীবনটা উপভোগ করেছে, পরিক্ষায় ভালোও করেছে। তাই সঠিক জায়গায় সময় ব্যয় করতে হবে। ভুল লক্ষ্যে ব্যয় করে লাভ নাই।
হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
"নিশ্চয়ই সকল কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল, এবং মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী প্রতিফল পাবে। সুতরাং যার হিজরত হবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উদ্দেশ্যে, তবে তার হিজরত আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জন্যই গণ্য হবে। আর যার হিজরত হবে দুনিয়া লাভ বা কোনো নারীকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে, তবে তার হিজরত সেই উদ্দেশ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে।"
(সহিহ বুখারি: ১, সহিহ মুসলিম: ১৯০৭)
২) ভালো পরিবেশ নির্বাচনঃ
যদি আপনার বাসায় সারাদিন ঝগড়া হয়। তাহলে অন্যদের মতো বোকা হয়ে ভাববেন না যে একদিন আপনি সফল হবেন। ভালো হয় যত দ্রুত সম্ভব বাসা ছেড়ে দেয়া।
প্রত্যেক সফল ব্যক্তি সফলতার জন্য তাদের বাড়ি ছেড়েছে। জনাব আকিজ উদ্দীন, মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, মার্ক জাকারবার্গ আরও অনেকেই।
তাই পড়াশোনা হোক বা ব্যবসার কাজ সব সময় অসুস্থ মনের ব্যক্তিদের এড়িয়ে শান্ত জায়গা বেছে নিবেন।
৩) আত্নবিশ্বাস রাখাঃ
সব কাজের ফলাফল পেতে সময় লাগে। তাই ধৈর্য্য ধরুন। যেমনঃ আপনি কালকে কোচিং একটি পরিক্ষা দিবেন, কিন্তু আপনার ভালো করে পড়া হয়নি। এমন সময় হতাশ না হয়ে আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন। হতে পারে আপনি নতুন কিছু করতে চাচ্ছেন, কিন্তু আপনার বিভিন্ন আত্নীয় বলছে আপনি ব্যর্থ, আপনি অসফল হবেন। তাদের কথায় কান না দিয়ে নিজের কথা শুনুন।
থমাস আলভা এডিসন বলেছিলেন,প্রতিভা হল ১% অনুপ্রেরণা এবং ৯৯% পরিশ্রম। আমি ব্যর্থ হইনি, আমি কেবল ১০,০০০টি উপায় খুঁজে পেয়েছি যা কাজ করে না।
৪) চিন্তাশীল হওয়াঃ
প্রত্যেক সফল ব্যক্তি যারা ইতিহাসের পাতায় নাম নিখেছে তারা সবাই চিন্তাশীল ব্যক্তি ছিলেন। এর মানে যে অতিরিক্ত চিন্তা করা তা নয়। চারপাশের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করা।
মজার একটি ব্যপার হলো, আপনি কখনো ঈগলকে খাচায় বন্দি করে রাখতে পারবেন না। কারণ ঈগলের সব সময় উঁচুতে উড়ে।
৫) পরিশ্রম করাঃ
কঠোর পরিশ্রমই একজন ব্যক্তির জীবনে সফলতা আনে। তবে পরিশ্রমটা সঠিক জায়গায় করতে হবে। উদাহরণঃ আপনি দিনে প্রায় ১০-১২ ঘন্টা পড়াশোনা করছেন বিসিএস ক্যাডার হবেন। যদি কোনো কারণে বিসিএস ক্যাডার না হোন? তখন আপনার সব পরিশ্রম বৃথা।
৬) ভালো বই পড়াঃ
কথায় আছে ভালো বই মানুষের আসল বন্ধু। সত্যি তাই!
সারাদিন শুধু স্কুলের বই না পড়ে, অন্য রকম বই পড়ার চেষ্টা করুন। দেখবেন কিছু না কিছু শেখা হবে। নাহলে সময়টা ভালো কাটবে। বই পড়ার মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন হয়।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
"জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিম নর ও নারীর উপর ফরজ।"
(সুনান ইবনে মাজাহ, হাদিস: ২২৪, মিশকাত: ২১৮)
৭) ভালো আচরণ ও নৈতিকতা
একজন মানুষের পরিচয় তার ব্যবহার বা আচরণে। ভালো আচরণ ভালো মানুষের গুণ।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
"কিয়ামতের দিন মুমিনের পাল্লায় উত্তম চরিত্রের চেয়ে ভারী কোনো জিনিস থাকবে না। আর আল্লাহ তাআলা সেই ব্যক্তিকে ঘৃণা করেন, যে অশ্লীল ও অভদ্র আচরণকারী।"
(সুনান আত-তিরমিযী; হাদিস: ২০০২)
নৈতিকতা একজন ভালো মানুষের গুণ। সত্যকথা বলুন। প্রতারণা করা এড়িয়ে চলুন। ওজনে সঠিক দিন। ভালো মানের জিনিস বিক্রয় করুন।মনে রাখবেন, হালাল উপার্জনের চেয়ে ভালো টাকা আর নেই।
৮) মজবুত সামাজিক বন্ধন
মানুষ সামাজিক জীব। সামাজিক বন্ধন ভালো হলে দেখবেন জীবনটা একটু অন্যরকম কাটছে। ভালো মানুষের সাথে বন্ধুত্ব তৈরি করুন। খারাপ লোকদের এড়িয়ে চলুন। কোনো ভালো সামাজিক সংগঠন যেমনঃ বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবির অথবা এলাকার কতজন বন্ধু মিলে তৈরি করা একটি ছোট সংগঠন যা বিভিন্ন সময় সামাজিক কাজ করে।
"একটি ভালো পরিবর্তন কেবল তখনই সম্ভব যখন আমরা একে অপরের প্রতি সহানুভূতি ও দয়া প্রদর্শন করি।" - দালাই লামা।
"একতা হল শক্তি, বিচ্ছিন্নতা দুর্বলতা।" - ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
এই বিষয়ে একটি হাদিস হলোঃ
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
“তোমরা ঈমান না আনা পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, আর পরস্পরকে ভালো না বাসা পর্যন্ত প্রকৃত ঈমানদার হতে পারবে না। আমি কি তোমাদের এমন একটি জিনিস বলব, যা করলে তোমরা পরস্পর ভালোবাসবে? তোমাদের মাঝে সালামের প্রচলন করো।”
(সহিহ মুসলিম: ৫৪)
সবশেষে,
জীবনে সুখ দুঃখ দেওয়ার মালিক একমাত্র আল্লাহ তাআলার। সুতরাং তাঁর উপর ভরসা রাখুন। আর দুনিয়ার সফলতাই আসল সফলতা নয়। আখিরাতের সফলতাই আসল সফলতা।
ভালো লাগলে জানাবেন। ধন্যবাদ।

কোন মন্তব্য নেই